ভয়েস অফ গোপালগঞ্জ ডেস্ক,
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার প্রায় ১৫টি গ্রামের অন্তত দুই লাখ মানুষের জেলা শহরে যাতায়াতের প্রধান পথ গোপালগঞ্জ-তালা-কেকানিয়া সড়ক। ১৯৯৯ সালে মাত্র ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি নির্মিত হয়। কিন্তু ২০১৯ সালে এ সড়কটির সংস্কারে ১০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হলেও কয়েক বছরের মধ্যেই রাস্তার বিভিন্ন স্থান ধসে গিয়ে তৈরি হয়েছে গভীর গর্ত ও ফাটল। ফলে সড়কটি এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে হাজারো মানুষ ও যানবাহনকে। স্থানীয়দের অভিযোগ—সংস্কারের নামে বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও কাজের মান ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের।
সড়কটি ব্যবহারকারী মানিকহার, মধুপুর, পাটিকেলবাড়ি, ঘোড়াদাইড়, সুলতানশাহী, কেকানিয়া, সরসপুর, গোপালপুর, পুখরিয়া, শশাবাড়ি, পাইকান্দি, বিজয়পাশা, জয়নগরসহ পার্শ্ববর্তী নড়াইল জেলার কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। রাস্তার অর্ধেক অংশ ভেঙে যাওয়ায় বাকি অংশ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালাতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের ভাষায় সড়কের এখনকার অবস্থা “চলার যোগ্য নয়”।
ভ্যানচালক ভুলু শেখ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রাস্তা দিয়ে মাল নিয়ে যেতে ভয় লাগে। ১০ কোটি টাকা খরচ করেও যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে এই সংস্কারের লাভ কী?”
মাইক্রোবাস চালক ইব্রাহীম খলিল বলেন, “গাড়ি চালাতে গেলে মনে হয় নৌকায় আছি। যে কোনো সময় গাড়ি উল্টে যেতে পারে। গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে, যাত্রীদের কষ্ট হচ্ছে।”
থ্রি-হুইলার চালক মহাসিন খান জানান, “বর্ষায় গর্তে পানি জমে গেলে বোঝাই যায় না কোথায় রাস্তা আছে। যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
সড়কের পাশে বসবাসকারী মোহাম্মদ আলী খান ও প্রভাশ মণ্ডল বলেন, “এটাই আমাদের শহরে যাওয়ার একমাত্র সড়ক। দুই লাখ মানুষ ভোগান্তিতে আছে। এত টাকা খরচ করেও রাস্তা টেকসই হয়নি—এটা বড় প্রশ্ন।”
এদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) জানিয়েছে, সড়কের সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে।
গোপালগঞ্জ এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ হাসান বলেন, “গোপালগঞ্জ-তালা-কেকানিয়া সড়কের সংস্কারের জন্য টেন্ডার আহ্বানের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
তবে ভুক্তভোগীদের দাবি, শুধু টেন্ডার আহ্বানে নয়—দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। একই সঙ্গে অতীতের মতো নিম্নমানের কাজ না করে মানসম্পন্ন ও স্থায়ী সংস্কার নিশ্চিত করার দাবি তাদের।
জনগণের প্রশ্ন—
নির্মাণ ব্যয়ের দশ গুণ অর্থ খরচ করেও যখন দুর্ভোগ কাটেনি, এবার কি সড়কটি টেকসইভাবে সংস্কার হবে, নাকি আবারও হবে অর্থের অপচয়?
মন্তব্য করুন