ভয়েস অফ গোপালগঞ্জ ডেস্ক
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে ঐক্যের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, তা দৃশ্যত বাস্তবায়ন হতে দেখা যাচ্ছে না। ১৭ অক্টোবর সনদে স্বাক্ষরের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এটিকে ‘নতুন বাংলাদেশের সূচনা’ বলে মন্তব্য করলেও, রাজনৈতিক দলগুলো এখনো নিজেদের দাবি-দাওয়া ও অবস্থান নিয়ে ভিন্ন সুরে কথা বলছে। সনদে এখন পর্যন্ত ২৫টি রাজনৈতিক দল ও জোট স্বাক্ষর করলেও মতের অমিল কাটছে না—বরং আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
একদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে; অন্যদিকে দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে কি না, সে বিষয়ে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে জামায়াতসহ সাতটি রাজনৈতিক দল কর্মসূচি পালন করছে। গত দুই দিনে তিনটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে নিজেদের দাবি ও অবস্থান জানিয়েছেন। এতে স্পষ্ট হয়েছে—দলগুলো এখনো এক ছাতার নিচে আসতে পারছে না।
জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সংগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, ‘শাপলা’ প্রতীক না পেলে তারা নির্বাচন করবে না। অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচন পরিচালনা ও পোলিং এজেন্ট-সংক্রান্ত উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে।
এই ভিন্নমুখী অবস্থান জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আরও জটিল করে তুলছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন—২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এবং সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনৈক্য বেড়ে যাওয়ায় মাঠপর্যায়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “প্রতীক ছাড়া আমরা কীভাবে নির্বাচনে যাব? নির্বাচন কমিশনের আচরণ আমাদের কাছে নিরপেক্ষ মনে হচ্ছে না।” তিনি প্রশাসনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও তুলে ধরেন।
অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “আমরা নির্বাচন চাই। কিন্তু কিছু দল যেন নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে—এটি হতাশাজনক।”
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে গণভোট ও নির্বাচন এক দিনে অনুষ্ঠিত হলে ভোটার বিভ্রান্তি ও নির্বাচনপ্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে মন্তব্য করেন। তিনি নভেম্বরের মধ্যে গণভোটের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন—
দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সকল দলের সংলাপে বসে সমঝোতায় পৌঁছানো জরুরি।
অন্যথায় রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে জাতীয় অগ্রযাত্রা ব্যাহত হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “প্রতিদ্বন্দ্বিতাই রাজনীতিকে সচল রাখে। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে এলে দলগুলোকে এক বিন্দুতে আসতেই হবে।”
মন্তব্য করুন