শিক্ষা ডেস্ক | ভয়েস অফ গোপালগঞ্জ
দীর্ঘ অচলাবস্থা ও টানাপোড়েনের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন নিয়ে তৈরি হওয়া শঙ্কা অবশেষে কেটে গেছে। শিক্ষক ও কর্মকর্তারা আপাতত আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আসন্ন ১৬ অক্টোবরের ভোট আয়োজন এখন অনেকটাই নিশ্চিত ও নির্বিঘ্ন।
সব পক্ষের মধ্যে আলোচনার পর তৈরি হয়েছে এক ইতিবাচক পরিবেশ— ফলে প্রার্থী, নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন আশাবাদী, রাকসু ভোট হবে উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে।
প্রশাসনের তৎপরতায় মিলেছে সমাধান
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। অবশেষে তাঁদের রাজি করাতে সক্ষম হয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আলীম বলেন,
> “প্রশাসন রাকসুর আগে কোনো কর্মসূচি না দিতে অনুরোধ করেছে। আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছিলাম— প্রশাসন সে বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে। তাই রাকসুর স্বার্থে আপাতত আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতির সভাপতি মো. মোক্তার হোসেনও জানান,
> “রাকসু নির্বাচনের আগে আমরা কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছি না। এখন যদি কর্মসূচি দিই আর নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমাদেরই দায় হবে। তাই আমরা নির্বাচনে পূর্ণ সহযোগিতা করব।”
প্রার্থীদের মধ্যে স্বস্তি ও আশাবাদ
শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্তে প্রার্থীদের মধ্যে ফিরেছে স্বস্তি।
ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন বলেন,
> “রাকসু নির্বাচন নিয়ে একটা শঙ্কা ছিল, কিন্তু শিক্ষার্থীরা এবার সেটা জয় করেছে। কেউ বানচালের চেষ্টা করলেও আমরা তা ব্যর্থ করব। ১৬ তারিখেই ভোট হবে— উৎসবের আবহে।”
একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও ভিপি প্রার্থী মুস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন,
> “শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। রাকসু সবার অধিকার, এটি সময়মতো হতেই হবে। কেউ বানচালের চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীরা তা সফল হতে দেবে না।”
নির্বাচন কমিশনের আশাবাদ
রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ. নজরুল ইসলাম বলেন,
> “শিক্ষক ও কর্মকর্তারা প্রশাসনকে জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে তাঁরা কোনো কর্মসূচি দেবেন না। তাঁরা নির্বাচনে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। তাই এখন রাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই।”
পটভূমি
এর আগে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের লাগাতার কর্মবিরতির কারণে রাকসু নির্বাচন ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত হয়। পরে নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১৬ অক্টোবর।
অচলাবস্থার সূত্রপাত ঘটে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তকে ঘিরে। ১৮ সেপ্টেম্বর প্রশাসন ১০ শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। ২০ সেপ্টেম্বর জুবেরী ভবনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষক ও কর্মকর্তা সংগঠনগুলো কর্মবিরতির ডাক দেয়, যা ধীরে ধীরে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে রূপ নেয়।
২১ সেপ্টেম্বর জরুরি সিন্ডিকেট সভায় প্রশাসন পোষ্য কোটা পুনর্বহাল স্থগিত করে এবং শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে আন্দোলন না থামায় নির্বাচন কমিশন ভোট স্থগিত করে।